ব্যারিয়াট্রিক সার্জারি (ওজন কমানোর জন্য উদর ও অন্ত্রের অস্ত্রোপচার)
অস্বাস্থ্যকর স্থূলতা
স্বাভাবিক ওজনের চেয়ে ৪৫ কিলোগ্রাম (১০০ পাউন্ড) ওজন বেশি থাকার সমস্যাটি অস্বাস্থ্যকত স্থূলতা হিসেবে পরিচিত। এটি বডি মাস ইনডেক্স (BMI) ৪০ এর সমতুল্য। যখন এই মাত্রায় শরীরের ওজন বাড়তে থাকে, তখন সেই ব্যক্তি বিভিন্ন মারাত্মক রোগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকেন। তাই, বিশ্বব্যাপী এখন গৃহীত হয়েছে যে অস্বাভাবিক স্থূলতা শুধু কোন শরীরের আকারের ভিন্নতা নয়, বরঞ্চ এটি একটি রোগ।
যখন শরীরের ওজন এই মাত্রায় বেড়ে যায়, তখন বিভিন্ন গতানুগতিক নন-সার্জিক্যাল ওজন হ্রাসের পদ্ধতি যেমন, খাদ্যাভ্যাস বদলানো, শারীরিক অনুশীলন করা এবং অ্যান্টি-অবেসিটি ওষুধ খাওয়া ইত্যাদি বেশিরভাগ সময় কাজ করে না বা দীর্ঘমেয়াদী সুফল পাওয়া যায় না। এইসকল রোগীদের জন্য, ব্যারিয়াট্রিক সার্জারির মাধ্যমে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ওজন কমানোর পদ্ধতিটি একমাত্র বাস্তবসম্মত সমাধান একটি সফল এবং দীর্ঘমেয়াদী ওজন নিয়ন্ত্রণ পাওয়ার জন্য। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ হেলথ (NIH) দ্বারা এই চিকিৎসাটি অস্বাভাবিক স্থূলতার সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে।
স্বাস্থ্য ঝুঁকি
- ডায়াবেটিস
- উচ্চ রক্তচাপ & উচ্চ কোলেস্টেরোল
- হৃদযন্ত্র বিকল এবং হৃদরোগ
- স্ট্রোক এবং রক্তের ক্লট যা ফুসফুসে চলে আকস্মিক মৃত্যু ঘটতে পারে।
- ঘুমের মধ্যে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া বা স্লিপ অ্যাপনিয়া
- মেদবহুল যকৃৎ, পিত্তথলিতে পাথর এবং পিত্তথলি বা গল ব্লাডারে সংক্রমণ
- বুকজ্বালা বা গ্যাস্ট্রো-ইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (জিইআরডি)
- শরীরের ভারবাহী জোড়াসন্ধি যেমন পিঠ, পশ্চাদদেশ & হাঁটু
- ঋতুস্রাব, জটিলতা এবং মহিলাদের মধ্যে প্রজনন
- কিছু ক্যান্সারের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি
- স্বল্প আয়ুষ্কাল
- গর্ভকালীন জটিলতা
ওজন কমানোর সমাধান
ল্যাপারোস্কোপিক ব্যারিয়াট্রিক সার্জারি (ল্যাপারোস্কোপের সাহায্যে ওজন কমানোর জন্য উদরসহ অন্ত্রের অস্ত্রোপচার) একটি নূন্যতম প্রবিষ্টমূলক অস্ত্রোপচার যা পাকস্থলীর সক্ষমতা খুবই কম পরিমানে হ্রাস করে এবং যা রোগীর ওজন কমাতে সাহায্য করে। সবচেয়ে বেশি যে ল্যাপারোস্কোপিক ব্যারিয়াট্রিক সার্জারি করা হয় তা হলো ল্যাপারোস্কোপিক গ্যাস্ট্রিক বাইপাসগ্যাস্ট্রিক স্লিভ এবং ল্যাপ ব্যান্ড সার্জারি।
গ্যাস্ট্রিক বাইপাস
ল্যাপাস্কোপিক রু-এন-ওয়াই গ্যাস্ট্রিক বাইপাস একটি ল্যাপাস্কোপিক কৌশল দ্বারা পরিচালনা করা হয়, যা উদরে ছোট ছোট ছিদ্র (পোর্ট) করার মাধ্যমে করা হয়। এর মধ্যে একটি পোর্ট দিয়ে দীর্ঘ সরু একটি ক্যামেরা প্রবেশ করানো হয় যাতে উদরের অভ্যন্তরীণ অংশ পরিদর্শন করা যায়। অন্যান্য পোর্টগুলো অন্যান্য দীর্ঘ সরু যন্ত্রপাতি প্রবেশ করানোর জন্য ব্যবহৃত হয় যাতে উদরের কোন অংশ না কেটেই ভেতরে অপারেশন করা যায়। স্ট্যাপলিং যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয় একটি নতুন এবং ক্ষুদ্র স্টোমাক পাউচ তৈরি করার জন্য, যেটি ক্ষুদ্রান্তের সাথে সংযুক্ত করা হয়, এবং উদরের বাকি অংশ বাইপাস করা হয়। এই অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পাকস্থলীর আকার হ্রাস করা হয় এবং এর ফলে রোগী কম খেতে পারে, সাথে সাথে রোগীর ক্ষুধাও কমে যায় এবং খাওয়ার পর পর খুব দ্রুতই পেট ভরে যায়।
গ্যাস্ট্রিক স্লিভ
ল্যাপাস্কোপিক স্লিভ গ্যাস্ট্রেকটোমি একটি সার্জিক্যাল ওজন-হ্রাস করার জন্য প্রক্রিয়া যা পাকস্থলীর একটি অংশ অপসারন করে এর ধারণক্ষমতা কমায় এবং এরপর উন্মুক্ত প্রান্তগুলো স্ট্যাপলিং-এর মাধ্যমে বন্ধ করে দেয়। এই অস্ত্রোপচারটি ল্যাপাস্কোপির মাধ্যমে করা হয়, এতে উদরের চারটি স্থানে ক্ষুদ্র আকারে কর্তন করতে হয় যার দৈর্ঘ্য হয় এক থেকে দুই সেন্টিমিটার পর্যন্ত। এরপর পাকস্থলীর পঁচাত্তর থেকে আশি শতাংশ অপসারিত করা হয়। এই ন্যূনতম ইনভেসিভ প্রক্রিয়াটিতে হাসপাতালে খুব কম সময়ই থাকতে হয়। এই অস্ত্রোপচারের উদ্দেশ্য হলো কোন ক্ষুধা না সৃষ্টি করেই এর মাধ্যমে রোগীর খাদ্যের পরিমান মারাত্মক কমিয়ে দেয়। নতুন পাকস্থলীর রেস্ট্রিকটিভ প্রভাবের মাধ্যমে ক্ষুধা খুব কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়; এর ফলে খুব তাড়াতাড়ি পেট ভরা অনুভূত হয়।
সার্জারি জন্য প্রার্থী
- যেসকল রোগীদের ওজন তাদের আদর্শ শরীরের ওজনের থেকে প্রায় 45 কিলোগ্রাম বেশি (100 পাউন্ড), যা বিএমআই >40-এর (বডি মাস ইনডেক্স) সমান।
- যেসকল রোগীদের বিএমআই 40 –এর কম এবং কিছু মেডিকেল জটিলতা রয়েছে, যেমন অতিরিক্ত ওজনের কারণে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, স্লিপ অ্যাপনিয়া, এবং অস্থি-সন্ধিতে ব্যথা।